একটা সময় ছিল যখন বিশ্বে যোগাযোগ ও তথ্য অনুসন্ধানের জন্য সবাইকে চিঠিপত্র, রেডিও, টেলিভিশন, পত্র-পত্রিকা ও মোটা বাইন্ডিং এর এনসাইক্লোপিডিয়ার প্রতি নির্ভর করতে হত। একে অপরের সাথে যোগাযোগের জন্য আমরা তখন বন্ধু-বান্ধব, পরিবার ও পাড়া-প্রতিবেশীদের মত নিবিড় সম্পর্কের প্রতি নির্ভরশীল ছিলাম। একসময় আমাদের জীবনে ইন্টারনেট এলো। ইন্টারনেটের মাধ্যমে সারাবিশ্বের সাথে যোগাযোগ করা সহজ বলে গোটা বিশ্ব চলে এলো আমাদের মুঠোয়। আমাদের সামনে উন্মোচিত হতে থাকল সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। বদলে গেলো আমাদের জীবন।
বিশ্বের কয়েকটি রাষ্ট্র ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত, আর এটি আমাদের অনেকেরই বিশ্বস্ত বন্ধুতে পরিণত হয়েছে। সমগ্র বিশ্বকে সংযুক্তকারী ইন্টারনেট আমাদের পারষ্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক বিশাল সম্পদে রুপান্তরিত হয়েছে। এখন সব ধরণের কাজে আমরা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারি- স্কুলের প্রজেক্টের জন্য লেখা ও পড়া, বন্ধু-বান্ধবের খোঁজ-খবর নেয়া, ভিন্ন প্রজন্মের মাঝে দূরত্ব কমিয়ে আনা, সুস্বাদু ও মুখরোচক রান্না শেখা, হাতের তৈরি জিনিষ বিক্রি করা, বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখা, কিংবা পথ হারালে পথের দিশা খুঁজে পেতে আমরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকি। আমরা চাকরি খুঁজতে, প্রজেক্ট সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশাবলী পেতে, সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করতে, দেশ ও বিদেশ থেকে কেনাকাটা করতে, অনলাইন জার্নাল বা ব্লগের মাধ্যমে নিজের চিন্তা ও চেতনার প্রকাশ ঘটাতে এবং এমন সব বিষয় সম্পর্কে জানতে ইন্টারনেটের ব্যবহার করতে পারি, যা একসময় আমরা কল্পনাও করতে পারতাম না।
ইন্টারনেট পৃথিবীকে ক্রমশ ছোট করে একেবারে হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে। চলুন জেনে নিই সঠিকভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করার উপায়গুলো।
জ্ঞান অর্জন ও তথ্য অনুসন্ধানের জন্য
এখন আমরা যেকোন বিষয়ে জানার জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারি। গুগল বা বিং এর মত সার্চ ইঞ্জিনে এক বা একাধিক শব্দ লিখে সার্চ দিলে সে বিষয়ে একাধিক লিংক আমাদের কাছে চলে আসে। ইউটিউবের মতো ওয়েবসাইটের নির্দেশনামূলক ভিডিওর মাধ্যমে আমরা রান্না করা বা টাই বাঁধার মত কাজগুলো শিখতে পারি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি আশেপাশের দোকনা বা রেস্টুরেন্টগুলো কোথায় রয়েছে এবং সেখানে খাবারের দাম কত, ইন্টারেনেটের মাধ্যমে আমরা ঐতিহাসিক তথ্য নিয়ে গবেষণা করতে এবং প্রিয় জায়গার ছবি দেখতে পারি।
একে অন্যের সাথে যোগাযোগের জন্য
ইমেইল, সামাজিক যোগাযোগ সাইট, সোশ্যাল মিডিয়া বা অনলাইন ফোরামের মাধ্যমে আমরা এখন একে অপরের সাথে আগের চাইতে অনেক বেশি সংযুক্ত। পৃথিবীর যেখানেই আমরা থাকি না কেন ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা সহজেই একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারি। বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মোবাইল ক্লাসরুম শহরের উৎকৃষ্টমানের শিক্ষকদের সাথে গ্রামের শিশুদের সংযুক্ত করে। একইভাবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবা পৌছে দেয়া সম্ভব হয় গ্রামে কিংবা দূরবর্তী কোন দূর্গম অঞ্চলে। ইন্টারনেট এমন একটি বিষ্ময়কর ব্যবস্থা যা বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষকে কাছে আনে।
বিনোদনের জন্য
টেলিভিশন দেখতে, রেডিও শুনতে, গেমস খেলতে অথবা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে আগে ভিন্ন ভিন্ন যন্ত্র ব্যবহার করতে হত। এখন মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট এদের সবগুলোকে একটি মাধ্যমে নিয়ে এসেছে। ইউটিউব, স্ট্রিমিং মিডিয়া, অনলাইন মিডিয়া, উইন্ডোজ মিডিয়া প্লেয়ার ৩ ও আইটিউনসের মত এমবেডেড মিডিয়া, এবং অ্যাপল টিভি, রোকু, এক্সবক্স ও প্লেস্টেশন ইত্যাদি বিভিন্ন ডিজিটাল মিডিয়া রিসিভারের মাধ্যমে ইন্টারনেট থেকে বিনোদন লাভ করা সম্ভব।
সুযোগ সৃষ্টির জন্য
লিংকডইন, ইটসি, অ্যামাজন, ক্রেইগলিস্ট, ব্লগার ইত্যাদি সাইট ব্যবহার করে যে কেউ চাকরির সন্ধান করতে, উৎপাদিত পণ্য বিপণন এবং বিক্রয়ের সুবিধা খুঁজতে কিংবা নিজের মতামত প্রকাশ করতে পারে।
তাই এখন আমাদের হাতের মুঠোয় শুধু পৃথিবীর তথ্যভান্ডারই নয়, আমাদের নিজস্ব মতামত বিশ্বের সামনে তুলে ধরার সুযোগও এখন হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। আর এসবই সম্ভব হয়েছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে।